কেশবপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে পৌর শহরের ত্রাসসৃষ্টিকারী, দূর্ধর্ষ চাঁদাবাজ এবং একাধিক মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী জামাল শেখ (৩৩) কে গ্রেফতার করেছে। রবিবার (২৯মে) বিকেলে পৌরশহরের ত্রিমোহিনী মোড় এলাকা থেকে অপহরণ মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সে মধ্যকুল গ্রামের আব্দুল গনি শেখের ছেলে। ইতিপূর্বে জামালের বিরুদ্ধে থানায় অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মারমারিসহ ৯টি মামলা রয়েছে। সন্ত্রাসী জামাল গ্রেফতার হওয়ায় পৌর শহর সহ বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ন-আহবায়ক আবু সাঈদ লাভলুর আপন চাচাতো ভাই ও পাঁজিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুকুল এর ছেলে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মাছুম বিল্লাহ (২২) এবং ইকরামুল হোসেন (২৩) মটরসাইকেল যোগে কেশবপুর বাজারে আসার উদ্দ্যেশে বাড়ি থেকে বের হয়।
কেশবপুর টু পাঁজিয়া সড়কের পথিমধ্যে পৌরশহরের বালিয়াডাঙ্গা হারেজ খাঁর ইট ভাটা এলাকায় পৌঁছালে পূর্বশত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে জামাল বাহিনী অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদেরকে অপহরণ করে। অপহরণকারীরা গন্তব্যস্থলে আটকে রেখে ওই দু’জনকে বেধড়ক মারপিট এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মাছুম এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে তার চাচাতো ভাই নাজমুল এর ব্যবহৃত ফোনে কল করে নগত ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
দাবীকৃত মুক্তিপণের টাকা না দিলে তাদেরকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি তৎক্ষণিকভাবে নাজমুল কেশবপুর থানা পুলিশকে অবহিত করেন। তারই প্রেক্ষিতে থানার পুলিশসহ এলাকার লোকজন চারিদিকে খোঁজাখুজি করতে থাকে। বিষয়টি ব্যাপক জানাজানি হলে অপহরণকারীরা পৌর শহরের হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় মাছুম ও ইকরামুলকে ফেলে রেখে যায়। খবর পেয়ে সেখান থেকেই থানা পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে।
অপহরণের ঘটনায় মাছুমের আপন চাচাতো ভাই পাঁজিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক নাজমুল হোসাইন বাদী হয়ে জামালসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে কেশবপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। থানার মামলা নম্বর-১৪। মামলা হওয়ার পর থেকে অপহরণকারীরা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয়।
আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত ছিল। তারই প্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রবিবার (২৯মে) বিকেলে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ বোরহান উদ্দীনের নেতৃত্বে থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শুভ্র প্রকাশ দাস ও উপ-পুলিশ পরিদর্শক লিখন কুমার সরকার সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে পৌরশহরের চিংড়া ও ত্রিমোহিনী মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে জামাল শেখকে গ্রেফতার করে।
জামালের বিষয়ে এলাকাবাসীর অনেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারা বলেন, কেশবপুর উপজেলার মধ্যকুল গ্রামের গনি শেখের ছেলে জামাল শেখ ইজিবাইক চালানো ছেড়ে দিয়ে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। পৌরশহরের নতুন ভবন নির্মাণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন, জমিজমা ক্রয়-বিক্রয়, অবৈধভাবে জমিজায়গা দখল, মৎস্য ঘের দখল,
কেউ বিদেশ থেকে ফিরে আসলে তাকেও ছাড় দেওয়া হয়না, বড় বড় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি। তাদের দাবি পূরণ না করায় অনেকেই তাদের হামলা ও মারপিটের শিকার হয়ে গুরুত্বর আহত হয়েছেন, আবার অনেকেই হয়েছেন অপহরণের শিকার। শুধু তাই নয়! নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে আহত করেছেন।
এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ বোরহান উদ্দীন বলেন, অপহরণ মামলায় দূর্ধর্ষ জামাল শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে মারামারি, চাঁদাবাজি,
অপহরণ মামলাসহ ৯ টি মামলা রয়েছে। অপহরণ হওয়া মাসুম ও ইকরামুলকে ঘটনার দিন রাতেই উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিকে সোমবার সকালে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।